ছবিতে লাল দাগ দ্বারা চিহ্নিত স্থানটির নাম 'আল মুলতাজাম'।


ছবিতে লাল দাগ দ্বারা চিহ্নিত স্থানটির নাম 'আল মুলতাজাম'।
যে সকল স্থানে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন সেগুলোর অন্যতম হলো 'আল মুলতাজাম'। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মুলতাজামে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয় আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা প্রদান করেন।[১]
হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবা শরীফের দরজা পর্যন্ত প্রায় দুই মিটার দীর্ঘ জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে।[২]
মুলতাজাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ এঁটে থাকার জায়গা বা জড়িয়ে ধরার স্থান। সাহাবায়ে কেরাম মক্কায় এসে মুলতাজামে যেতেন ও দু’হাতের তালু, দু’হাত, চেহারা ও বক্ষ রেখে দোয়া করতেন।
আবদুর রহমান ইবনে সাফওয়ান বলেন,
رَأَيْتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم قَدْ خَرَجَ مِنْ الْكَعْبَةِ هُوَ وَأَصْحَابُهُ وَقَدْ اسْتَلَمُوا الْبَيْتَ مِنْ الْبَابِ إِلَى الْحَطِيمِ وَقَدْ وَضَعُوا خُدُودَهُمْ عَلَى الْبَيْتِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسْطَهُمْ.
‘আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের কাবাঘর থেকে বের হতে দেখলাম। অতঃপর তারা কাবাঘরের দরজা থেকে নিয়ে হাতিম পর্যন্ত স্পর্শ করলেন এবং তাঁরা তাঁদের গাল বাইতুল্লাহ্‌র সাথে লাগিয়ে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের মাঝে ছিলেন।’[৩]
বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বে বা পরে অথবা অন্য যেকোনো সময় মুলতাজামে গিয়ে দোয়া করা যায়। ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
إِنْ أَحَبَّ أَنْ يَأْتِيَ الْمُلْتَزَمَ وَهُوَ مَا بَيْنَ الْحَجَرِ الأَسْوَدِ وَالْبَابِ فَيَضَعُ عَلَيْهِ صَدْرَهُ وَوَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَكَفَّيْهِ وَيَدْعُوْ، وَيَسْأَلُ اللهَ تَعَالَى حَاجَتَهُ، فَعَلَ ذَلِكَ وَلَهُ أَنْ يَفْعَلَ قَبْلَ طَوَافِ الْْوَدَاعِ، فَإِنَّ هَذَا الاِلْتِزَامُ لاَ فَرْقُ بَيْنَ أَنْ يَكُوْنَ حَال الْوَدَاعِ وَغَيْرِهِ، وَالصَّحَابَةُ كَانُوْا يَفٍْعَلُوْنَ ذَلِكَ حِيْنَ يَدْخُلُوْنَ مَكَّةَ.
‘যদি সে (তাওয়াফকারী) ইচ্ছা করে হাজরে আসওয়াদ ও দরজার মধ্যবর্তী স্থান মুলতাজামে আসবে। অতঃপর সেখানে তার বক্ষ, চেহারা, দুই বাহু ও দুই হাত রাখবে এবং দোয়া করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজনগুলো চাইবে, তবে এরূপ করা যায়। বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বেও এরূপ করতে পারবে। মুলতাজাম ধরার ক্ষেত্রে বিদায়ী অবস্থা ও অন্যান্য অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবিগণ যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন এরূপ করতেন।[৪]
এ স্থানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়নি। তবে ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাসহ একাধিক সাহাবি এখানে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে দোয়া করেছেন।
সাহাবিদের আমলের প্রেক্ষিতে জানা যায়- এ স্থানে আমল করার পদ্ধতি হলো; বান্দা তার বুক, মুখ, দু’হাতের কুনই ও কব্জি কা‘বার সাথে মিলিয়ে রেখে ইচ্ছামত দোয়া করবে।[৫]
তবে দোয়া এতো দীর্ঘ করা যাবে না যাতে অন্যদের সুযোগ নষ্ট হয়। অর্থাৎ স্থান সংকীর্ণ করা যাবে না।[৬]
তবে বর্তমান যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে মুলতাজামে ফিরে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সুযোগ পেলে যাবেন অন্যথায় যাওয়ার দরকার নেই। কেননা মুলতাজামে যাওয়া তাওয়াফের অংশ নয়।
_______________________________________________
[১]. (মাজমুআল ফাতাওয়া:২৬/১৪২)
[২]. (আল মুসান্নাফ লি আব্দির রাজ্জাক: ৫/৭৩)।
[৩]. আবু দাউদ শরিফ; হাদিস নং ১৮৯৮। এই হাদিসের সনদে দুর্বলতা আছে। কিন্তু তার অনুরূপ একটি হাদিস ‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রুকন ও দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন। তিনি তার বক্ষ, দু’বাহু ও দু’হাতের তালু সম্প্রসারিত করে কাবাঘরের ওপর রাখলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে এমনটি করতে দেখেছি।
আবু দাউদ শরিফ; হাদিস নং ১৮৯৯; ইবনু মাজাহ; হাদিস নং ১৯৬২। এ হাদিসের সনদ উত্তম।
[৪]. (মাজমুআল ফাতাওয়া : ২৬/১৪২)।
[৫]. (ইবনু মাজাহ; হাদিস নং ১৯৬২ সহিহাহ; হাদিস নং ২১৩৮)।
[৬]. (মাজমুআল ফাতাওয়া ২৬/১৪২-১৪৩)।

Post a Comment

0 Comments