সব ফলের মধ্যে আঙ্গুর ফল একটু অভিজাত বলেই গণ্য করা হয়। অন্যান্য ফলের চেয়ে আঙ্গুরের দামও বেশি। সুস্বাদু এই আঙ্গুর ফল দিয়ে ওয়াইন, রস, এবং জেলি-জ্যাম ইত্যাদি তৈরি করা ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন দেশের নানারকম মুখরোচক রান্নায় এর ব্যবহার হয়। আর একটা কথা জানেনই তো আঙ্গুর শুকিয়ে হয় কিশমিশ, যা ছাড়া আপনার শখের খাবারগুলো একদমই বেমানান।
আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এগুলির মধ্যে রয়েছে বি১, সি, কে ভিটামিন অন্যতম। এছাড়াও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিস। আঙ্গুর শুকিয়ে সাধারণত তৈরি হয় কিশমিশ এবং কিশমিশে রয়েছে ৬০ শতাংশ ফ্রুকটোজ। আসুন জেনে নেই আঙুর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত।
আঙ্গুরের ইতিহাস :
প্রায় আজ থেকে ৬,০০০-৪,০০০ বছর আগে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলের দিকে আঙ্গুরের চাষ শুরু হয়। ৪,০০০ বছর আগে জর্জিয়ায় ওয়াইন তৈরির প্রমাণ খুব ভালভাবে পাওয়া গেছে। এর মানে হল আঙ্গুর অনেক পুরানো একটি ফল ও আঙ্গুরের তৈরি খাবারের ইতিহাস অনেক কালের পুরনো। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, ১৩০০ শতাব্দীতে পার্শিয়ানরা ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রথম আঙ্গুর চাষ প্রবর্তন শুরু করেন, যা পরবর্তীতে ভারতের দক্ষিনাঞ্চলে বিস্তার আকার লাভ করে। ভারতের দক্ষিনাঞ্চলের উঞ্চ আবহাওয়ায় আঙ্গুরের চাষ হলেও বাংলাদেশে এখনও আঙ্গুর চাষে সফল হতে পারেনি। আঙ্গুর সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের মাটি ও আবহাওয়া জন্মাতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবুজ ,লাল, সাদা, কালছে খয়েরি এমন নানা রঙের আঙ্গুর জন্মায়। এমনকি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে আজকাল বীচি ছাড়া আঙ্গুর জন্মানো হয়ে থাকে। সারা পৃথিবীর প্রায় ৭৫.৮৬৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে আঙ্গুর চাষ হয়ে থাকে। তবে মোট উৎপাদনের ৭১% ওয়াইন বানাতে, ২৭% তাজা ফল হিসেবে এবং শুধু ২% শুকনো ফল হিসাবে ব্যবহার হয়। তাছাড়া কোথাও কোথাও এর পাতাও খাওয়া হয়।
আঙ্গুরের চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা : ১. ক্যানসার নিরাময়ে: আঙ্গুর সাধারণত আমরা জুস করে খেয়ে থাকি। আঙ্গুরের এই জুসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফামিটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহ দূর করে থাকে। সাধারণত এই প্রদাহ ক্যান্সার রোগ জন্মের অন্যতম প্রধান কারণ।
২. ত্বককে সুরক্ষিত রাখে:
আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এটি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩. বয়সের ছাপে বাধা:
আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলস ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়। আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের ত্বক ঠিক রাখে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে।
৪. কিডনির ভাল রাখতে:
আঙ্গুরের সব ভিটামিন উপাদানগুলো ক্ষতিকারক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখে। সেই সঙ্গে আমাদের কিডনির রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধেও কাজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। এ ছাড়া আঙ্গুর আমাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রোধ করে।
৫. নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন:
সাধারণত যারা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন বিশেষ করে তাদের জন্য আঙ্গুরের জুস খুবই উপকারী। আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা আমাদের শরীরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে থাকে।
৬. ভুলে যাওয়া রোগ নিরাময়:
আমরা অনেকেই ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব দ্রুত ভুলে যায়। আবার দেখা যায় কোনো কথা বেমালুম স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এটি সত্যিকার অর্থে এক ধরনের রোগ। এই ভুলে যাওয়া রোগটি নিরাময়ে আঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৭. স্তন ক্যান্সার নির্মূল:
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন যেসব নারীরা তারা নিয়মিত খেতে পারেন আঙ্গুর। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে আঙ্গুরের উপাদানগুলো স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পুরোপুরি সক্ষম।
৮. চুলের যত্নে:
চুলের একটু অযত্নেই আমাদের চুল খুশকিতে ভরে যায় এমন অনেকেই আছেন। এছাড়াও দেখা যায় চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে, ধূসর রঙের হয়ে যায় এবং শেষমেশ চুল ঝরতে থাকে। এইসব সমস্যার সমাধানে আপনি আঙ্গুর খেতে পারেন।
৯. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে:
আঙ্গুরে সাধারণত টরোস্টেলবেন নামে এক ধরনের যৌগ থাকে, যা আমাদের শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১০. শরীরের হাড় শক্ত করে:
আঙ্গুরে আছে প্রচুর পরিমাণে তামা, লোহা ও ম্যাংগানিজের মতো খনিজ পদার্থ থাকে, যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১১. মাথাব্যথা দূর করতে:
হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলে আপনি ঔষধ না খেয়ে আঙ্গুর খেলে আরাম বোধ হয়।
১২. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়:
আমাদের চোখ ভালো রাখতে আঙ্গুর অনেক বেশি কার্যকর। বয়সজনিত সমস্যার কারণে যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী এই ফল।
১৩. অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে আঙ্গুর:
আঙ্গুরের ঔষধি গুনাগুন অনেক। আঙ্গুরের এই ঔষধি গুণের কারণে এটি অ্যাজমার ঝুঁকি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে এবং আমাদের শরীরে ফুসফুসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ায়।
১৪. বদহজম দূর করতে:
যদি নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়া হয় তাহলে বদহজম অনেকাংশে দূর হয়। অগ্নিমন্দ্যা দূর করতেও আঙ্গুর অনেক বেশি কার্যকর।
0 Comments